বিগত সরকার প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যা ও জনগণের ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব হরণ করে এক ভয়ংকর একক দলীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল। জনগণের বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করে খুন, গুম, যাকে তাকে যখন তখন ধরে নিয়ে গিয়ে টর্চার রিমান্ড, দলীয় গুন্ডা বাহিনীর অত্যাচার, টর্চার সেল বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ত্রাসের স্বৈরতা কায়েম করেছিলো।
দালাল ছাড়া আমরা স্বাধীন ও অন্যায়ের প্রতিবাদী রাজনৈতিক দলগুলো ছিলাম ভয়ংকর ভীতিকর আতঙ্কজনক চাপের মধ্যে, এ অবস্থায় ছাত্র-জনতার কোটা আন্দোলন হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দমনের পরিণতিতে এক স্বৈরদস্যুতা থেকে মুক্তির এক দফার আন্দোলনে পরিণত হয়।
দেশ ও জনগণের মুক্তির জন্য আমরা সকল ঝুঁকি নিয়ে সরাসরি এ আন্দোলনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করি, শেষে স্বৈরসরকার পতন হয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ইন্টেরিম সরকার গঠিত হয়। যতদিনই যাক ইন্টেরিম সরকার ইন্টেরিম ই হয়, ইন্টেরিম সরকারকে দলনিরপেক্ষ থাকতে হয়।
ইন্টেরিম সরকার কোন বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করলে গণতন্ত্র কখনো অর্জিত হবে না এবং মুক্তির নামে ধোকা হবে। ইন্টেরিম সরকার নির্বাচিত সাংবিধানিক সরকার নয়, তবে পরিস্থিতির কারণে ইন্টেরিম সরকারকে আমরা জনগণ সমর্থন দিয়ে থাকি কেবল গণতন্ত্র ফিরে এসে রাষ্ট্র ও জনগণের সুরক্ষার জন্য, অভ্যন্তরীণ ভাবে রাষ্ট্র সুরক্ষা বলতে প্রথমত ভিতরের কোন একক দলীয়করণ গোষ্টিকরণ থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষাকরণ বুঝায়।
আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি যদি গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হয় এবং রাষ্ট্রকে রক্ষা এবং আগামীতে সত্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হয় তাহলে ইন্টেরিম সরকারকে অবশ্যই কঠোরভাবে দলনিরপেক্ষ হতে হবে। বিশেষভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখানে রাষ্ট্রকে দলীয় কুক্ষিগতকরণ ও জবরদখলের অপরাজনীতির প্রবণতা আছে।
এদেশে সুস্থ ও স্বাভাবিক মানবিক গণতান্ত্রিক রাজনীতি এখনো বিকশিত হয়নি। বিশেষভাবে ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদী দলগুলো এখানে প্রকাশ্যে গণতন্ত্র মানবাধিকার অস্বীকার করে। ধর্মের নামে তাদের মনগড়া ধর্মের একক গোষ্ঠীবাদী স্বৈরতা চাপিয়ে দিয়ে রাষ্ট্র জবরদখলই ওদের রাজনীতি।
ধর্মরাষ্ট্রের নামে জনগণের সমস্ত অধিকার স্বাধীনতা লুণ্ঠন করে গণতন্ত্র হত্যা করে তালেবানি আইএস জঙ্গিবাদী প্রক্রিয়াই ধর্মের মানবিক শিক্ষার বিপরীত ধর্মের নামে চলমান অধর্ম উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতির দলগুলোর চরিত্র। সেই একাত্তর থেকেই মওদুদিবাদি জামাত-শিবিরের ভয়ংকর রাজনীতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জবরদখল, অন্যদের কণ্ঠরোধ করা, নিজেদের মতবাদ চাপিয়ে দেওয়ার স্বৈররাজনীতি আমরা সবাই জানি।
হেফাজত নামের দলটি অরাজনৈতিক বলে মিথ্যা দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে ভয়ংকর হিংস্র অপরাজনীতিতে যুক্ত। আফগান তালেবানের মত দলটি মা বোনদের চতুর্থ শ্রেণীর বেশি পড়ালেখা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। চরমোনাই ইসলামী আন্দোলনের নামে আরেকটি ধর্মের নামে দল প্রকাশ্যে খুনি এজিদের স্বৈরদস্যুতন্ত্রের সমর্থন করে এদেশে তালেবানি আইএস রাষ্ট্র কায়েমের তৎপরতায় লিপ্ত।
এসব দলগুলো ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার বিপরীত এবং ইসলামের নাম ব্যবহার কেবলমাত্র মুসলিমদের ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার করে ধর্মের নাম অপব্যবহার করে রাষ্ট্র জবরদখল করে তাদের অধর্ম উগ্রবাদ জঙ্গিবাদ চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
আমরা আল্লাহতালার হাবীব প্রাণাধিক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত ইসলামের নির্দেশিত সব মানুষের স্বাধীনতা অধিকারভিত্তিক সর্বজনীন মানবতার রাষ্ট্রের দিশা তুলে ধরে সব মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল মানবতার রাজনীতির শিক্ষা তুলে ধরে এসব ধর্মের নামে উগ্রবাদি অপরাজনীতির আদর্শিক একাডেমিক প্রতিরোধ করছি।
ধর্মের নামধারী অধর্ম উগ্রবাদী অসাম্প্রদায়িক দল নয়, কোন রাজনৈতিক দলের নেতাই ইন্টেরিম সরকারে থাকতে পারেনা। থাকলে ভবিষ্যৎ নির্বাচন কোন মতেই জনগণের নির্বাচন হবে না। ইন্টেরিম সরকার অবশ্যই দলনিরপেক্ষ হতে হবে না হয় গণ আন্দোলন দেশ জনগণ ও গণতন্ত্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।
দেশের গণতন্ত্রকামী মানবাধিকারের ধারক আমরা সমগ্র জনগণ ইন্টেরিম সরকারের প্রতি দলনিরপেক্ষ সর্বজনীন চরিত্র আশা করি, যার কোন ব্যত্যয় দেশের ভবিষ্যত পুনরায় অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়ে ধ্বংস হবে। ইন্টেরিম সরকারে যদি ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতির নেতা থাকে তাহলে তা আমাদের কাছে দেশে আবার গণতন্ত্র স্বাধীনতা উৎখাত করে ধর্ম রাষ্ট্রের নামে একক গোষ্ঠীর পাশবিক স্বৈরতন্ত্র কায়েমের অপচেষ্টা গন্য হবে।
ইন্টেরিম সরকারের কাছে দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের আশা অর্পিত এবং জনগণের আমানত হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্পিত। আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি ইন্টেরিম সরকারকে অবশ্যই দল নিরপেক্ষ থাকতে হবে, এজন্য হেফাজত ও ইসলামি আন্দোলন নামধারী ধর্মীয় নেতা জনাব খালিদ হাসানকে অবশ্যই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করে ইন্টেরিম সরকারের দলনিরপেক্ষ নীতি ও চরিত্র রক্ষা করতে হবে।
আমরা নিশ্চিতভাবে দাবি করছি যে খালিদ হাসান নামে উপদেষ্টা পরিষদে নিযুক্ত ব্যক্তি তথাকথিত হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর এবং চরমোনাই এর তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা। তিনি কোন অবস্থায় ইন্টেরিম সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকতে পারেন না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ওয়াবি কৌমী মতবাদের অনুসারী এবং সবাই জানে দুনিয়ায় সব জঙ্গিবাদ উগ্রবাদের উৎস ওয়াবীবাদ সালাফিবাদ।
আমরা দেশের নিবন্ধিত মানবিক রাজনৈতিক দল ইনসানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ দ্বীন ও দেশ রক্ষায় এবং আগামীর নির্বাচন কোন দলের পক্ষপাতযুক্ত না হয়ে জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের স্বাধীন মানবিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সার্থে ইন্টেরিম সরকারের দলনিরপেক্ষ সর্বজনীন চরিত্র রক্ষার্থে এই ব্যক্তিকে অপসারণ করার জোর দাবী জানাচ্ছি। নাহয় আমরা জনগণ ইন্টেরিম সরকারের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে আগামীর মুক্ত নির্বাচন এবং দেশ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত হতে বাধ্য।
এ প্রসঙ্গে আমরা উল্লেখ করতে চাই যে, কোন ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে আমাদের কোন বিদ্বেষ নাই। তবে ইন্টেরিম সরকারে কোন দলীয় ব্যক্তি বিশেষত ধর্ম রাষ্ট্রের নামে গণতন্ত্রবিরোধী সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা উপদেষ্টা পরিষদে থাকলে দেশ ও গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ধর্ম দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমরা জনগণকে নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ ছাড়া উপায় থাকবে না।
সব মানুষের জীবনের নিরাপত্তা-অধিকার-স্বাধীনতা ও রুটি রুজির সংস্থান তখনই কেবল থাকে যখন রাষ্ট্র সবার হয়, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ সবাই হয় মানবতার রাষ্ট্রের মাধ্যমে মানবতার রাজনীতির রাষ্ট্র একক গোষ্ঠীবাদী স্বৈরতামুক্ত থাকে এবং রাষ্ট্র সবার হয়। জীবনের দয়াময় স্রষ্টা ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্তভাবে প্রতিটি মানুষের জীবনের আত্মমালিকানা ও সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় মালিকানার ভিত্তিতেই মানবিক গণতন্ত্রের ধারায় জীবনের গতিপ্রবাহ জারি থাকে। রাষ্ট্র একক গোষ্ঠীর হয়ে গেলে ও জীবনের নিরাপত্তা ধ্বংস ও জীবনের স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়ে খুন-গুম-জেল-জুলুম-রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের-স্বৈরদস্যুতন্ত্র কায়েম হয়ে মানব জীবন ও রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যায়।
বাংলাদেশের জনগণ ও নিজেদের জীবনের মালিকানা-স্বাধীনতা-অধিকার-নিরাপত্তার তথা অস্তিত্ব রক্ষায় মৌলিক আকাঙ্ক্ষায় মানবতার রাষ্ট্রের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। ইন্টেরিম সরকার যদি দল নিরপেক্ষতা অক্ষুন্ন না রেখে কোন দলীয় পক্ষপাতিত্ব করেন কিংবা জনগণের রাষ্ট্র জনগণের হাতে তুলে না দিয়ে নিজেরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেন তাহলে জনগণের মুক্তির আশা ব্যর্থ হয়ে ইতিহাসের কাঠগড়ায় আসামি হয়ে থাকবে।
প্রশ্নাতীত দলনিরপেক্ষ স্বচ্ছ থেকে দেশের জনগণের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যত মানবিক গণতন্ত্র বিনির্মাণে ইতিহাসের অর্পিত দায়িত্ব পালনে আমরা ইন্টেরিম সরকারের সাফল্য কামনা করি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব এর চেয়ারম্যান আল্লামা ইমাম হায়াত, উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা চেয়ারম্যান ফাতেহা রাহনুম, মহাসচিব শেখ রায়হান রাহবার ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বৃন্দ।